শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০৭:৪৯ অপরাহ্ন
জিকির উল্লাহ জিকু:
ইয়াবার পর এবার মিয়ানমার থেকে দেশে আসছে ভয়ংকর মাদক আইস। বুধবার এমনই একটি মাদক আইসের চালান উদ্ধার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ভয়ংকর এই মাদক আইসের চালান উদ্ধারের ঘটনায় উদ্ধিগ্ন আইনশৃংখলা বাহিনী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মাদকের পাশাপাশি দেশে আসছে মরণ নেশা ইয়াবা। কিন্তু, পাচার হয়ে আসা মাদকের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ভয়ংকর মাদক আইস বা ‘ক্রিস্টাল মেথ’। এটি ইয়াবার চেয়ে ১০০ গুণ মারাত্মক মাদক ‘আইস’। মাদক আইস সেবনে মস্তিষ্ক বিকৃতিসহ মৃত্যুও ঘটতে পারে। এই মাদকের মূল উপাদান মেথা ফেটামিন বিষণœতা থেকে মুক্তি ও প্রাণসঞ্চারে উজ্জীবিত হতে ১৯৫০ সালে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পরে তা বিবর্তিত হয়ে ভয়ংকর মাদকে রূপ নেয়। ইন্দ্রিয় অনুভূতি, সাহস ও শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি যৌন উত্তেজনা বাড়াতে এই মাদক পরিচিতি পেলেও এর ক্ষতিকর দিকই বেশি বলে জানা গেছে। এই মাদক সেবনে অনিদ্রা, অতিরিক্ত উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, শরীরে চুলকানিসহ নানা রোগ দেখা দেয়। ধোঁয়ার মাধ্যমের চেয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে এ মাদক নিলে মাত্র ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হয়। আর এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো কর্মকান্ড ঘটাতে দ্বিধা করে না এই মাদক গ্রহণকারীরা।
টেকনাফে এক প্রেসব্রিফিংয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ বিশেষ জোনের ইন্সপেক্টর জিল্লুর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা জানতে পারেন যে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া এলাকার গোলাল নবীর ছেলে মো: আব্দুল্লাহ বাড়িতে ভয়ংকর মাদক আইসের বিশাল চালান মজুদ রয়েছে। এখবরে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা। এসময় ২ কেজি মাদক আইস সহ মো: আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় আব্দুর রহমান নামে তার এক সহোদর পালিয়ে যায়।
জিল্লুর রহমান জানান, বেশ কিছুদিন যাবৎ মিয়ানমার থেকে শক্তিশালী মাদক আইস বা “ক্রিস্টাল মেথ” এর চালান বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সম্ভাব্য স্থানে গোপনে নজর রাখা হচ্ছিল। বুধবার বিকালে জাদিমুড়া এলাকায় দুই সহোদরের বাড়িতে আইসের চালান জব্দ করা হয়। জব্দকৃত মাদক আইস চালানের নমুনা জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি ভয়ংকর মাদক আইস। যা ভয়ংকর মাদক ইয়াবার চেয়ে ১০০গুন শক্তিশালী। যার আনুমানিক মূল্য তিন কোটি টাকা হলেও ইউরোপের বাজার মুল্য ১৬ কোটি টাকা।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছেন, আইসের উৎপত্তিস্থল অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন। জীবনঘাতী এই মাদক ব্যবহার করা হয় মূলত স্নায়ুর উত্তেজনা বাড়াতে। ধূমপানের মাধ্যমে, ইনজেক্ট করে বা ট্যাবলেট হিসেবে এটা নেওয়া যায়। ব্যয়বহুল এই মাদক অভিজাত শ্রেণির মাদকসেবী ছাড়া সেবন সম্ভব নয়। অত্যন্ত দামি এই মাদক ব্যবহারে ক্ষতি অনেক বেশি। এটি সেবনের ফলে মাদকাসক্তরা দীর্ঘ সময় কাজ ও চিন্তা করার স্ট্যামিনা পায় বলে জানায়। দীর্ঘদিন এটি ব্যবহার করলে হৃদরোগ ও স্ট্রোক হয়।
জানা গেছে, ১৮৮৭ সালে জার্মানিতে মেথা ফেটামিনের উৎপত্তি ঘটে। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এর বিবর্তনের মাধ্যমে জাপানি সৈন্যদের, বিশেষ করে যুদ্ধবিমানের চালকদের অনিদ্রা, উত্তেজিত ও নির্ভয় রাখার জন্য ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৬০ সালে এর অপব্যবহার বেড়ে যায়। ১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার মেথা ফেটামিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরে ১৯৯০ সালে মেক্সিকোর মাদক ব্যবসায়ীরা বিবর্তনের মাধ্যমে মাদক হিসেবে এটি ছড়িয়ে দেয় আমেরিকা, ইউরোপ, চেক রিপাবলিক ও এশিয়াসহ পৃথিবীব্যাপী। ২০১০ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ওই বছর অস্ট্রেলিয়ায় মাদক হিসেবে এর ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। এশিয়ার দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও চীনে এর ব্যবহার রয়েছে ব্যাপক।
ভয়েস/আআ